ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ইসলামপুরে জুয়া ও মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দেয়ায় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা

বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে জুয়া ও মাদকের দুইটি আস্তানা গুড়িয়ে দেয়ায় নিরীহ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে দুইটি মামলা করেছে জুয়াড়ী ও মাদক ব্যবসায়ীরা। মামলা নং জিআর-৩৮৯/১৭ এবং জিআর মামলা নং-৪১৭/১৭। কোন ধরণের ঘটনা ছাড়াই মামলা দুইটি রেকর্ড করেছে চকরিয়া থানা। বিশেষ মহলের ইশারায় দায়ের করা মামলাটি দুইটি তদন্তপূর্বক প্রত্যারের দাবী জানান এলাকাবাসী। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আইজি, ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
গত ১৪ জুলাই নতুন অফিস এলাকা থেকে দুইটি জুয়া ও মাদকের আস্তানা উচ্ছেদ করে এলাকাবাসী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা চকরিয়া থানায় জিআর-৩৮৯/১৭ মামলা দায়ের করে। ১৮ জুলাই দায়ের করা মামলায় ১৮ জন নিরীহ লোক আসামী করা হয়।
দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করা হয় ২ আগষ্ট। তাও আবার ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে কক্সবাজার সদরের সদরের ইসলামপুর নতুন অফিস এলাকা। ওই মামলায় আসামী করা হয়েছে নিরীহ ৯ ব্যক্তিকে।
আসামীরা হলেন- ইসলামপুরের ২ নং ওয়ার্ডের ছৈয়দ আহমদের ছেলে আবদুশ শুক্কুর, মৃত মমতাজ আহমদ প্রকাশ মমতাজ বৈদ্যের ছেলে মোঃ এরশাদ, মোঃ আলম প্রকাশ নাগা আলেমের ছেলে সাজ্জাদ মোঃ নওশাদ প্রকাশ বাপ্পি, শাহ আলমের ছেলে জসিম উদ্দিন, মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে নুরুল আবছার, আবুল হাশেমের ছেলে মোবারক, মোজাফ্ফর আহমদের ছেলে শাহ আলম, জুমনগর এলাকার মৃত কবির আহমদের ছেলে রশিদ আহমদ এবং নতুন অফিস এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে মনসুর।
মামলার বাদী খুটাখালী শিয়াপাড়া এলাকার সাহেদা ইয়াছমিন সোহাগ নামের এক মহিলা, যিনি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ী গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী। মিথ্যা তথ্যের উপর কিভাবে চকরিয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড হলো, তা ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। বায়বিয় মামলায় প্রশ্ন ওঠেছে পুলিশ কর্তকর্তার দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েও। গত ২ আগষ্ট চকরিয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়।
এজাহারে বাদীনি উল্লেখ করেছে, নতুন অফিসস্থ (বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে) ছগির মেম্বারের মুরগির ফার্মের সামনে তার স্বামী গিয়াস উদ্দিনকে মারধর করে এবং টাকা ছিনিয়ে নেয়। স্বামীকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখান থেকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এদিকে মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নতুন অফিস এলাকার বাসিন্দা এডভোকেট এস.এম জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে কক্সবাজার সদর এলাকায়, মামলা রেকর্ড করে চকরিয়া থানা। তা কিভাবে অসম্ভব? সাজানো ভিকটিম গিয়াস উদ্দিন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ী। ঘটনার সঙ্গে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
কৈলাশঘোনা এলাকার বাসিন্দা আবদুশ শুক্কুর বলেন, গিয়াস উদ্দিন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জুয়াড়ী ও মাদক ব্যবসায়ী। তার নেতৃত্বে শিয়াপাড়ার এলাকার ইমাম শরীফ প্রকাশ টুয়াইয়া, জসিম উদ্দিন, আবদুর রশিদ প্রকাশ পেটান, এনাম, ফারুক, মিনহাজ উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, সাহাব উদ্দিনসহ একটি সিন্ডিকেট ইসলামপুরের ৫ নং ওয়ার্ডভুক্ত জুমনগর এলাকার সরকারী বনভূমিতে আস্তানা গড়ে দীর্ঘদিন মদ, জুয়াসহ নানা অপরাধকর্ম চালিয়ে আসছে। ওই সিন্ডিকেটে আরো রয়েছে শিয়াপাড়ার নুরুল আজিম, মিন্টু, দেলোয়ার, নতুন অফিস এলাকার কামাল হোসেন, নুরুল হুদা, জয়নাল আবেদীন, আবদুশ শুক্কুর, এহছান। রয়েছে বেশ কয়েকজন নারীও। গত ২১ জুলাই দুইটি আস্তানা গুড়িয়ে দেয় এলাকাবাসী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদকসেবীরা প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণে এলাকার ৩ জন মারাতœক আহত হয়। এ ঘটনায় এজারহার নামীয় ৭ জনসহ আরো ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করি। মামলা নং-জিআর ৭৬১/১৭। গিয়াস উদ্দিন ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। তিনি ছাড়াও অন্যান্য আসামীরা হচ্ছে- হেলাল উদ্দিন, আবদুর রশিদ প্রকাশ পেটান, ইমাম শরীফ প্রকাশ টুয়াইয়া, এনাম, মিনহাজ উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন। জুয়া ও মাদকের আস্তানা গুড়িয়ে দেয়ার প্রতিশোধ নিতে সাজানো মামলাটি করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী ধারণা করেন। তবে, কোন ঘটনা ছাড়াই চকরিয়া থানা কিভাবে মামলা নিলেন, তা তদন্তের দাবী ভুক্তভোগীদের। এই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়।
মামলা প্রসঙ্গে চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মারধরের অভিযোগে মামলা রেকর্ড করা হয়। সঠিক তদন্তপূর্বক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। নিরপরাধ কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ্যাকশান নেয়া হবেনা।

পাঠকের মতামত: